বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর ৯০ দিনব্যাপী ফাউন্ডেশন কোর্স শেষ করে গতকাল সন্ধ্যা ২০.০০ ঘটিকায় আলফা ব্যাচের ৪৫ জন সদস্যকে বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জেম এ নিয়ে আসা হয়। আমরা এখানে ০১ বছর অবস্থান করবো। এ সময় নেভীর কিছু বেসিক কোর্স, ডাইভিং, সার্ভাইভ এবং ট্যাক্টিস কোর্সগুলো সম্পন্ন করানো হবে। শুনেছি নেভীর এই বেসটিই একমাত্র শান্ত, সবুজ নৈসর্গিক অপুরূপ স্নিগ্ধতায় ভরা।ভাটিয়ারী থেকে এখানে আসতে আসতে রাত হয়ে যাওয়ায় অপুর্ব সৌন্দর্যের নৈসর্গিক পরিবেশ দেখতে পাইনি। সকালে উঠে বি এম এর সেই পুরানো  অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বদলে গেল। কোন কোলাহল নেই। বাঁশি বিউগল এর করুণ আর্তনাদ ছাপিয়ে আমাদের ছুটাছুটি নেই। পূর্বের ট্রেনিংয়ের ক্লান্তি যেন মুহূর্তেই ভুলে গেলাম। মনে হলো, এই পরিবেশে আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্য পাঠানো হয়েছে। যদিও আসল ট্রেনিং কেমন হবে তা এখনো জানা নেই। সন্ধ্যার ফলিং রোল কলের পর জানতে পারবো।


দিনের শুরুটা বেশ অলসভাবেই কাটলো। আমরা একাডেমীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ালাম। সীনিয়রদের সাথে (ক্লিনার সাধারণ থেকে শুরু করে নন অফিসার) দেখা হলে BMA-তে শেখানো বুলিই আওড়াতাম চিতকার করে— "সালাম সাহেব, আমি সেইলর হাসিব, বিয়াচ (batch) নম্বর- 152575"। তাদের অনেকেই বিরক্ত হতো, আবার কেউ মুচকি হাসি দিয়ে আমাদের আচরণকে উপভোগ করতো। হয়তো কারো কারো মনের মধ্য পাঙ্গা দেওয়ার নতুন মুরগী পেয়েছে ভেবে পুলকিত থাকতো।

সারাদিন ঘোরাঘুরির পর সন্ধ্যার ফোলিংয়ে আমাদের পুরো এক বছরের ট্রেনিং কেমন হবে, তার একটি গাইডলাইন দেওয়া হলো। এখানকার ট্রেনিং সিস্টেম বেশ আলাদা। প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে দৌড়ানোর মাধ্যমে দিন শুরু হবে, যার মধ্যে পুরো একাডেমির উঁচু-নিচু রাস্তা ধরে ২ বার চক্কর দিতে হবে। আর বিকেলের স্পোর্টস সেশনের পর ফ্ল্যাগ নামানোর মাধ্যমে দিন শেষ হবে। প্রতি ১৫ দিন পর মধ্যরাতের যে কোন সময় ১৬ কিলোমিটার দৌড়াতে হবে,  প্রতি মাসের প্রথম রবিবার ২৭ কিলোমিটার দৌড়সহ নানাবিধ শারীরিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে। মাগরিবের নামাজের পর ফলিং রোল কল এবং লাইব্রেরী স্টাডি সেশন শুরু হবে, যা রাতের খাবারের আগপর্যন্ত চলবে। এরপর  ৯ টা থেকে ১০.৪৫পর্যন্ত  এই সময়টুকু আমাদের জন্য, যেখানে আমরা আড্ডা, গল্প, মুভি, বা কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজের মতো সময় কাটাতে পারবো। আনুসাঙ্গিক কাজ শেষ করে ১১.০০ টার সময় রুমের লাইট বন্ধ হয়ে যেত। আলহামদুল্লিল্লাহ! প্রতি ক্যডেট দের মধ্য হাল্কা স্বরে  একটা  আনন্দের ধ্বনি প্রকাশ পেলো। ভাবি একবছর সময়টাকে জান্নাত ভাবতে  শুরু করলাম।

লাইব্রেরী স্টাডি সেশন অংশ ছিল বই পড়া। বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের লাইব্রেরি থেকে নির্দিষ্ট কিছু বই পড়তে হবে এবং পড়া বই নিয়ে মতামত, সারাংশ রিপোর্ট লিখে জমা দিতে হবে। সেরা রিপোর্ট লিখতে পারলে এডজুট্যান্ট এর কাছ থেকে ০৭ (সাত) দিনের ছুটি পাওয়া যাবে। যদিও ৪৫ জনের মধ্যে কারো  কপালেই এই  গরম ছুটি জোটেনি। কারণ, বইগুলো কোনো রোমাঞ্চকর গল্প বা উপন্যাস ছিল না। রসহীন থিসিস, জার্নাল এবং নানান তথ্যসমৃদ্ধ বইগুলো পড়তে হত। এর মধ্যে ছিল পার্বত্য অঞ্চল, Bangladesh Navy Law, ম্যাপ গ্রেডিং, সার্ভাইভ এবং ট্যাক্টিস নিয়ে কিছু বই।

আমি পাহাড় নিয়ে আগ্রহী ছিলাম, তাই এই বইগুলোই আগে পড়া শুরু করলাম। সপ্তাহান্তে পড়া বইয়ের ওপর ভিত্তি করে "বই পড়ে কী শিখলাম" শিরোনামে আলাদা রিপোর্ট জমা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

  1. The Chittagong Hill Tracts: Life and Nature at Risk" – W. Van Schendel, Wolfgang Mey, Aditya Kumar Dewan
  2. "The Politics of Peace: A Case of the Chittagong Hill Tracts" – Amena Mohsin
  3. "Ethnic Insurgency and National Integration: A Study of Selected Ethnic Problems in South Asia" – Girin Phukon
  4. "Indigenous Identity in South Asia: Making Claims in the Colonial Chittagong Hill Tracts" – Meenaxi Barkataki-Ruscheweyh
  5. "Land Rights of the Indigenous Peoples of the Chittagong Hill Tracts, Bangladesh" – Raja Devasish Roy
  6. "The Jumma People of the Chittagong Hill Tracts" – Shapan Adnan and Ranajit Dastidar
  7. "The Unsettled Land: State-Making and the Politics of Land in Bangladesh's Chittagong Hill Tracts" – Nicolas T. D. Smith
  8. In the Forest of Freedom: The Fighting Indigenous People of Chittagong Hill Tracts" – Saleem Samad




শুভ রাত্রি  বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জেম 




 

Comments