Between Ashes and Hope: Chittagong Hill Tracts in the Blind Spot of Bangladesh Nationalism-Naeem Mohaiemen

 "Between Ashes and Hope: Chittagong Hill Tracts in the Blind Spot of Bangladesh Nationalism" চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রামের (CHT) জটিল ইতিহাস এবং এই অঞ্চলের আদিবাসী জনগণের, বিশেষত জুম্মা জনগণের, ধারাবাহিক প্রান্তিককরণ নিয়ে আলোচনা করে। এটি নাইম মোহাইমেন সম্পাদিত এবং বিভিন্ন লেখকের সমর্থনে রচিত, বইটি বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের জন্য আদিবাসী জনগণের প্রতিরোধ, পরিচয় এবং ক্রমাগত সংগ্রামের একটি বহুমুখী বর্ণনা প্রদান করে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

এই বইয়ের প্রবন্ধগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণ এবং বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাতের ঐতিহাসিক শিকড় অন্বেষণ করে। এই উত্তেজনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে শুরু হয়, যখন আদিবাসী জনগণের তাদের জাতিগত পরিচয় এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য দাবি সরকার দ্বারা উপেক্ষিত হয়। বইটি যুক্তি দেয় যে বাঙালি রাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে আদিবাসী জনগণকে একইকরণের চেষ্টা করেছে, তাদের পৃথক জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের দাবিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। একজন লেখক প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধিদের প্রতি উক্তিটি তুলে ধরেন: "তোমার জাতিগত পরিচয় ভুলে যাও এবং বাঙালি হও।"

১৯৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানে সংযুক্ত হওয়ার সময় থেকেই পরবর্তী সংঘাতের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যদিও এর অধিবাসীদের বেশিরভাগই অমুসলিম ছিল। সময়ের সাথে সাথে, একাধিক সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বসতি স্থাপনের নীতি প্রয়োগ করেছে, যা জমি ও সম্পদের উপর বিরোধ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে সশস্ত্র সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়, যার নেতৃত্ব দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS) এবং এর সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনী

আদিবাসী প্রতিরোধ:

বইয়ের বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ আদিবাসী জনগণের স্ব-নির্ধারণের জন্য অব্যাহত লড়াইকে জোর দেয়। জুম্মা জনগণ—বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত—তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং অধিকারগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ১৯৭২ সালে PCJSS গঠনের পর এবং ১৯৭৩ সাল থেকে শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রাম ছিল এই প্রতিরোধের মূল উপাদান।

লেখকরা যুক্তি দেন যে বাংলাদেশের রাষ্ট্র আদিবাসী জনগণের স্বায়ত্তশাসন এবং ভূমি অধিকারগুলির বৈধ দাবিগুলিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসাবে ভুল ব্যাখ্যা করেছে। প্রতিক্রিয়ায়, সরকার এই অঞ্চলের সামরিকীকরণ করে এবং বাঙালি বসতি স্থাপন নীতিগুলি বাস্তবায়ন করে, যা প্রায়ই সামরিক সহায়তায় সমর্থিত হয়। অ্যান্থলজি সহিংসতার অসংখ্য ঘটনা, সহ হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক স্থানান্তর সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিবরণ দেয়।

১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তি:

 একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যা সংঘাত সমাধানের একটি বড় পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। যদিও চুক্তিটি অঞ্চলের জন্য স্বায়ত্তশাসন এবং সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। বিভিন্ন প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব কীভাবে অব্যাহত অশান্তি, জমির বিরোধ এবং আদিবাসী জনগণের প্রান্তিককরণ ঘটিয়েছে।

বইয়ের একটি মূল সমালোচনা হল চুক্তির লক্ষ্যগুলি দুর্বল করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা। লেখকরা যুক্তি দেন যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পরেও, বাঙালি বসতি স্থাপনকারীরা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার অব্যাহত রেখেছে, সামরিক বাহিনী একটি শক্ত ঘাঁটি বজায় রেখেছে এবং ভূমি দখল একটি বিস্তৃত সমস্যা হিসাবে রয়ে গেছে। লেখক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান তার প্রবন্ধে চুক্তির "প্রতারণা" নিয়ে আলোচনা করেন, উল্লেখ করেন যে কীভাবে রাষ্ট্র আদিবাসী জনগণের মূল অভিযোগগুলি সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রান্তিককরণ:

বইটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের সাংস্কৃতিক বিলুপ্তি এবং অর্থনৈতিক শোষণও তুলে ধরা হয়েছে। "উন্নয়নের ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিকতা" প্রবন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে যে কাপ্তাই বাঁধের মতো রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন প্রকল্পগুলি কীভাবে হাজার হাজার আদিবাসী পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই স্থানচ্যুত করেছে। এই প্রকল্পগুলো প্রায়ই বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের এবং রাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, যার ফলে আদিবাসী জনগণ আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ে।

লেখকরা আরও আলোচনা করেছেন যে কীভাবে জাতীয় ভাষণ প্রায়ই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে "পশ্চাৎপদ" বা উন্নয়নের পথে বাধা হিসাবে উপস্থাপন করে। এর বিপরীতে, অ্যান্থলজি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী জনগণের ভূমিকার স্বীকৃতির পক্ষে যুক্তি দেয়, যা মূলত অস্বীকৃত রয়ে গেছে।

পরিচয়, জাতীয়তাবাদ এবং অন্তর্ভুক্তি:

বইয়ের একটি পুনরাবৃত্ত থিম হল বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশের বহুবিধ জাতিগত পরিচয়ের মধ্যে উত্তেজনা। লেখকরা যুক্তি দেন যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ঐতিহাসিকভাবে দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং পরিচয়কে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের ক্ষেত্রে। রাহনুমা আহমেদ তার প্রবন্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাতিগত একক প্রকৃতির সমালোচনা করেছেন, যুক্তি দিয়েছেন যে এটি অ-বাঙালি এবং অ-মুসলিম গোষ্ঠীগুলিকে প্রান্তিক করে।

বেশ কয়েকটি প্রবন্ধে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদকে নতুনভাবে চিন্তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা আদিবাসী জনগণের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং রাজনৈতিক অধিকারগুলিকে স্বীকৃতি দেয় এবং রক্ষা করে এমন আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থার পক্ষে। মনোজ চৌধুরী এবং অন্যান্যরা জাতীয় কল্পনাকে উপনিবেশ-মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন, যা একটি একক পরিচয় থেকে সরে এসে জাতির বহুসাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে গ্রহণ করে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা:

অ্যান্থলজিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিদেশী সরকারের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করে। যদিও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ ছিল, লেখকরা যুক্তি দেন যে এই প্রচেষ্টা প্রায়ই অপর্যাপ্ত বা ভুল নির্দেশিত ছিল। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং জাতিসংঘ বারবার আদিবাসীদের সাথে বাংলাদেশের আচরণের সমালোচনা করেছে, তবে অর্থবহ পরিবর্তন ধীরে ধীরে এসেছে।

অন্যদিকে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) দ্বারা অর্থায়ন করা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলি প্রায়ই পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা প্রধানত আদিবাসী সম্প্রদায়ের পরিবর্তে বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের সুবিধা দিয়েছে।

উপসংহার:

"Between Ashes and Hope: Chittagong Hill Tracts in the Blind Spot of Bangladesh Nationalism" পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে একটি নতুন সংলাপের আহ্বান জানায়, ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং আদিবাসী জনগণের অধিকার স্বীকৃতির জন্য। বইটি একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানের পক্ষে যুক্তি দেয় যা জুম্মা জনগণের জমি, সংস্কৃতি এবং স্বায়ত্তশাসনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং বাংলাদেশি জাতীয়তার মধ্যে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে।

লেখকরা যুক্তি দেন যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও জাতীয় চেতনায় একটি "অন্ধ বিন্দু", এবং যতক্ষণ না জমির অধিকার, সামরিক দখল এবং সাংস্কৃতিক প্রান্তিককরণের মতো অন্তর্নিহিত কারণগুলি সমাধান করা হচ্ছে না, ততক্ষণ প্রকৃত শান্তি এবং ন্যায়বিচার অধরা থাকবে।

Comments